রমজানের ফজিলত ও বরকত – কুরআন ও হাদিসের আলোকে রমজানের গুরুত্ব
রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই মাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বান্দাদের জন্য অফুরন্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সুযোগ রেখেছেন। এটি ইবাদত-বন্দেগির মাস, যেখানে কুরআন নাজিল হয়েছে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে রমজানের ফজিলত ও বরকত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
রমজানের ফজিলত কুরআনের আলোকে
আল্লাহ তাআলা কুরআনে রমজানের ব্যাপারে স্পষ্টভাবে বলেছেন:
شَهْرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلْقُرْءَانُ هُدًۭى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٍۢ مِّنَ ٱلْهُدَىٰ وَٱلْفُرْقَانِ
“রমজান হল সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী।”
(সুরা বাকারা: ১৮৫)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, রমজান শুধুমাত্র রোযার মাস নয়, বরং এটি সেই মাস যেখানে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা পুরো মানবজাতির জন্য জীবনপথের দিকনির্দেশনা।
রমজানের ফজিলত হাদিসের আলোকে
১. রমজান গুনাহ মাফের মাস
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (বুখারি: ৩৮)*
অর্থাৎ, রমজানের সঠিক রোজা পালন করলে আল্লাহ তাআলা অতীতের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।
২. জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“রমজান মাস শুরু হলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।” (বুখারি: ১৮৯৯, মুসলিম: ১০৭৯)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রমজানে ইবাদত করার পরিবেশ সহজ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানের প্রভাব কমে যায়।
৩. লাইলাতুল কদরের রাত রমজানে
রমজানের সবচেয়ে বড় ফজিলতের একটি হলো লাইলাতুল কদর। কুরআনে বলা হয়েছে:
“লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।” (সুরা কদর: ৩)
রমজানের বরকত ও গুরুত্ব
১. রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির।” (বায়হাকি: ৩৪৫৮)
অর্থাৎ, রমজান ধাপে ধাপে বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দেয়।
২. দোয়া কবুলের বিশেষ সময়
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময় প্রত্যাখ্যাত হয় না।” (তিরমিজি: ৩৫২৭)
অর্থাৎ, ইফতারের সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
রমজান আমাদের জন্য কী শিক্ষা দেয়?
১. ধৈর্য ও আত্মসংযম: রোজা আমাদের ধৈর্যশীল ও সংযমী হতে শেখায়।
২. আত্মশুদ্ধি: রোজার মাধ্যমে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে তাকওয়া অর্জন করা যায়।
3. সহানুভূতি: রোজার মাধ্যমে আমরা দরিদ্র মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারি এবং দানশীলতা বাড়ে।
৪. ইবাদতের প্রতি আগ্রহ: তারাবি, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ইত্যাদির মাধ্যমে ইবাদতের প্রতি মনোযোগ বাড়ে।
সারসংক্ষেপ
রমজান হল বরকত, রহমত ও মাগফিরাতের মাস। এই মাসে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের ক্ষমার দরজা খুলে দেন এবং জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ করে দেন। আমাদের উচিত রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা এবং তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে কাটানো।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের সঠিক হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন!
আপনার মতামত দিন!
এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার অনুভূতি কেমন ? আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন!