প্রশ্ন:- একজন আলেম বলছিলেন যে বুখারী শরীফ সাধারণ মানুষের পড়া উচিত নয়। কথাটা কি ঠিক ?
উ:- কোন আলেম যদি বলে থাকেন যে “বুখারী শরীফ সাধারণ মানুষের পড়া উচিত নয়”, তাহলে সম্ভবত তিনি এর পটভূমি বা প্রাসঙ্গিকতা বুঝিয়ে বলতে চেয়েছেন। আসুন, বিষয়টি স্পষ্ট করি।
১. কেন কিছু আলেম এই কথা বলেন?
সহীহ বোঝার জন্য যোগ্যতা দরকার: বুখারী শরীফে অনেক হাদিস রয়েছে, যেগুলোর অর্থ বোঝার জন্য গভীর জ্ঞান, ভাষাগত দক্ষতা (আরবি ভাষা), ফিকহি (ইসলামি আইন) জ্ঞান এবং প্রসঙ্গ (সাবাবুল-ওরূদ) জানা দরকার। সাধারণ মানুষ অনেক সময় হাদিসের বাহ্যিক অর্থ দেখে ভুল ব্যাখ্যা করতে পারে, যা বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে।
শ্রেণিকক্ষ ও মাদ্রাসার পদ্ধতি: মাদ্রাসাগুলোতে বুখারী শরীফ শেষ বর্ষে (দাওরায়ে হাদিস) পড়ানো হয় এবং সেখানে বিশেষজ্ঞ উস্তাদরা হাদিসের গভীর ব্যাখ্যা দেন। সাধারণ পাঠক এ ধরনের সহায়তা ছাড়া ভুল বোঝার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
বিষয়ের জটিলতা: হাদিসের ভাষা, প্রসঙ্গ ও শরিয়তের বিধান পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। অনেক হাদিসের অর্থ বাইরের দৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও, বাস্তবে সেগুলোর পেছনে গভীর জ্ঞান প্রয়োজন।
—
২. তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে?
অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সহ বই পড়া: সাধারণ মানুষের জন্য উপযুক্ত সমাধান হলো হাদিসের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সম্বলিত গ্রন্থ পড়া, যেমন — “রিয়াদুস সালিহিন”, “মিশকাত শরীফ” ইত্যাদি, যেখানে সহজভাবে হাদিসের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া: কোনো হাদিস পড়ে সন্দেহ হলে আলেমদের কাছে এর ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া উচিত। কারণ, আলেমরা কুরআন, হাদিস, তাফসির, এবং ফিকহ নিয়ে অধ্যয়ন করেন এবং সঠিক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হন।
—
৩. সাধারণ মানুষের জন্য করণীয়
বিশেষজ্ঞ আলেমদের থেকে জ্ঞান গ্রহণ: আলেমদের বক্তৃতা, লেকচার এবং কিতাব থেকে হাদিসের অর্থ বোঝা ভালো। যেমন: মাওলানা তারেক জামিল, মুফতি মেনক, বা অন্য বিশ্বস্ত আলেমদের ভিডিও লেকচার।
সহজ হাদিস সংকলন পড়া: রিয়াদুস সালিহিন, ফাজায়েলে আমল, ফাজায়েলে সাদাকাহ, এবং অন্যান্য সংক্ষিপ্ত সংকলনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ হাদিসগুলো সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
—
সারসংক্ষেপ
“বুখারী শরীফ সাধারণ মানুষের পড়া উচিত নয়” — এ কথা সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং সতর্কবার্তা। উদ্দেশ্য হলো, কেউ যেন নিজে নিজে হাদিসের ভুল অর্থ না বোঝে এবং বিভ্রান্ত না হয়। সাধারণ মানুষের জন্য আলেমদের ব্যাখ্যা নিয়ে হাদিস পড়া উত্তম। তবে এর মানে এই নয় যে বুখারী শরীফ একেবারে পড়াই যাবে না। সহজ ভাষায় অনুবাদ এবং ব্যাখ্যাসহ হাদিস পড়া উচিত।