بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

বিসমিল্লাহির রহ মা-নির রহিম:- বিস্তারিত বিশ্লেষণ

লেখক: মাওলানা কারী আহম্মদ আলী সাহেব
(আল কুরআন তালিম সেন্টার)

আজ আমরা আলোচনা করব একটি এমন বাক্য সম্পর্কে, যা প্রত্যেক মুসলিমের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি হলো “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”। প্রতিদিনের কাজ শুরু করার আগে এই বাক্যটি উচ্চারণ করা আমাদের অভ্যাস। তবে এর অর্থ, গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমরা আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি কেন এটি আমাদের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ।

এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা শিখব:

1. এর “আরবি উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ”।

2. “প্রতিটি শব্দের অর্থ এবং তাৎপর্য”।

3. “কুরআন ও হাদিসে এর গুরুত্ব”।

4. “এর ফজিলত এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার”।

আরবি উচ্চারণ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
বাংলা উচ্চারণ: বিস মিল্লা-হির রহ মা-নির রহি-ম।

বাংলা অর্থ:- “শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু।”

প্রতিটি শব্দের বিশ্লেষণ

1. بِسْمِ (বিসমি): অর্থ “নামের দ্বারা”। এটি নির্দেশ করে যে, কাজের সূচনা আল্লাহর নামের মাধ্যমে করা হচ্ছে।

2. اللّٰهِ (আল্লাহি): সর্বশক্তিমান আল্লাহর নাম।

3. الرَّحْمٰنِ (আর-রাহমান): পরম করুণাময়, যার দয়া সৃষ্টিজগৎকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

4. الرَّحِيمِ (আর-রাহিম): অতি দয়ালু, যার দয়া তাঁর বান্দাদের জন্য নিরন্তর।

গুরুত্ব ও তাৎপর্য

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” কুরআনের প্রতিটি সূরা শুরু করার আগে পড়া হয়, যা এর বিশেষ গুরুত্বকে নির্দেশ করে। এটি আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্য, নির্ভরতা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।

কুরআনে এর অবস্থান

1. বাআজ ওলামাগণের মত অনুসারে সূরাতুল ফাতিহার অংশ:
“ ( কিছু কিছু ওলামা এবং ফক্বিহ বিদ দের মত অনুসারে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” কুরআনের প্রথম সূরা সূরাতুল ফাতিহার অংশ) এবং এটি প্রতিটি সূরার শুরুতে অবস্থিত (সূরা তাওবার ব্যতীত)।

2. সূরা আন-নামল (২৭:৩০):
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সুলায়মান (আ.) রানী বিলকিসের কাছে চিঠি শুরু করেছিলেন এই বাক্য দিয়ে:
“এই চিঠি পাঠানো হচ্ছে সুলায়মানের পক্ষ থেকে এবং এটি শুরু হচ্ছে আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।”

হাদিসে এর গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে কাজ আল্লাহর নামে শুরু করা হয় না, তা অপূর্ণ থেকে যায়।” (ইবনে মাজাহ)

এ থেকে বোঝা যায়, যে কোনো কাজের শুরুতে এই বাক্য পাঠ করা বরকত ও সফলতার দ্বার উন্মুক্ত করে।

ফজিলত

1. আল্লাহর সাহায্য লাভ: যে কাজ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” দিয়ে শুরু করা হয়, তাতে আল্লাহর সাহায্য ও বরকত থাকে।

2. শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তি: এটি পড়ার মাধ্যমে শয়তানের কুমন্ত্রণার প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

3. মনের প্রশান্তি: আল্লাহর নাম স্মরণ করার মাধ্যমে মন শান্ত হয়।

4. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: এটি আল্লাহর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার একটি প্রকাশ।

ব্যবহার

1. খাওয়া শুরুর আগে।

2. কুরআন তিলাওয়াতের আগে।

3. ভ্রমণ বা কাজ শুরুর আগে।

4. প্রতিদিনের ছোট-বড় যেকোনো কাজের শুরুতে।

সারাংশ

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” শুধু একটি বাক্য নয়; এটি মুসলিম জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর স্মরণে পূর্ণ করে। এটি আমাদের শেখায় যে, জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহর নামে শুরু করা উচিত, যা আমাদের জন্য বরকত ও সফলতা বয়ে আনে।

আসুন, আমরা এই পবিত্র বাক্যটি সব কাজে অভ্যাস হিসেবে গড়ে তুলি এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও করুণা লাভ করার চেষ্টা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *