[পার্ট :০১]
মাসআলা:০১) প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক বালেগ মুসলিমের উপর রমযানের রোযা ফরয। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন-
فمن شهد منكم الشهر فليصمه
অর্থ: সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে। (সূরা বাকারা : ১৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭২)
মাসআলা:০২) শাবানের ২৯ তারিখ দিবাগত সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে পরদিন থেকে রোযা রাখতে হবে। নতুবা শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করার পর রোযা রাখা শুরু করবে।
عن ابن عمر رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه ذكر رمضان، فقال : لا تصوموا حتى تروا الهلال، ولا تفطروا حتى تروه.
অর্থ: আবদুল্লাহ্ ইবনে ‘উমর (রাদিআল্লাহু তা’আলা ‘আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেছেন, ‘(রমযানের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখবে না এবং (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখা বন্ধ করবে না।
’ (সহীহ মুসলিম ১/৩৪৭)
অন্য হাদীসে আছে, ‘(শা’বানের ২৯ দিন পূর্ণ করার পর) তোমরা যদি রমযানের চাঁদ না দেখ তাহলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করবে।’ (আলমুসান্নাফ, আবদুর রাযযাক হাদীস : ৭৩০১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৭)
মাসআলা:০৩) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে রোযা শুরুর জন্য এমন একজন ব্যক্তির চাঁদ দেখাই যথেষ্ট হবে, যার দ্বীনদার হওয়া প্রমাণিত কিংবা অন্তত বাহ্যিকভাবে দ্বীনদার।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ‘আববাস (রাদিআল্লাহু তা’আলা ‘আনহু) বলেন, ‘একজন মরুবাসী ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াছাল্লাম) এর নিকট (রমযানের) চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াছাল্লাম) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি একথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াছাল্লাম) তখন সকলকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (মুসতাদরাকে হাকিম ১/৪২৪; সুনানে আবু দাউদ ২৩৩৩; সুনানে নাসায়ী ২৪২২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৯৫৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮৫)
মাস’আলা:০৪) আকাশ পরিষ্কার থাকলে একজনের খবর যথেষ্ট নয়; বরং এত লোকের খবর প্রয়োজন, যার দ্বারা প্রবল বিশ্বাস জন্মে যে, চাঁদ দেখা গেছে। কেননা, যে বিষয়ে অনেকের আগ্রহ ও সংশ্লিষ্টতা থাকে তাতে দু’ একজনের খবরের উপর নির্ভর করা যায় না। (আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৮)
মাস’আলা:০৫) কোনো ব্যক্তি একাকী চাঁদ দেখেছে, কিন্তু তার সাক্ষ্য গৃহিত হয়নি, এক্ষেত্রে তার জন্য ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখা উত্তম, জরুরি নয়।
এক ব্যক্তি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিআল্লাহু তা’আলা ‘আনহু:)এর নিকট এসে বলল, ‘আমি রযমানের চাঁদ দেখেছি।’ উমর (রাদিআল্লাহু তা’আলা ‘আনহু) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সাথে অন্য কেউ কি দেখেছে?’ লোকটি বলল, ‘না, আমি একাই দেখেছি।’ উমর রা. বললেন, ‘তুমি এখন কী করবে?’ লোকটি বলল, ‘(আমি একা রোযা রাখব না) সবাই যখন রোযা রাখবে আমিও তখন রোযা রাখব।’ উমর (রাদিআল্লাহু তা’আলা ‘আনহু) তাকে বাহবা দিয়ে বললেন, ‘তুমি তো বড় ফিকহ ও প্রজ্ঞার অধিকারী।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৬৮; আলমুহাল্লা ৪/৩৭৮)
ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, এমন ব্যক্তির জন্য রোযা রাখা জরুরি না হলেও উত্তম হল রোযা রাখা। (বাদায়েউস সানায়ে ২/২২১)
মাস’আলা:০৬) শা’বান মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখে রোযা রাখবে না; না রমযানের নিয়তে না নফলের নিয়তে। অবশ্য যে পূর্ব থেকেই কোনো নির্দিষ্ট দিবসে (যথা সোম ও মঙ্গলবার) নফল রোযা রেখে আসছে, আর ঘটনাক্রমে শাবানের ২৯ ও ৩০ তারিখে ঐ দিন পড়েছে তার জন্য এই তারিখেও নফল রোযা রাখা জায়েয।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : نهي رسول الله عليه وسلم أن يتعجل شهر رمضان بصوم يوم أو يومين، إلا رجل كان يصوم صوما فيأتي ذلك على صومه.
নবী কারীম (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেন, তোমরা রমযান মাসের একদিন বা দুই দিন পূর্ব থেকে রোযা রেখো না। তবে কারো যদি পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট কোনো দিন রোযা রাখার অভ্যাস থাকে আর ঐ দিন উক্ত তারিখ পড়ে যায় তাহলে সে ঐ দিন রোযা রাখতে পারে।’ (সহীহ বুখারী ১/১৫৬, হাদীস : ১৯১; মুসানাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৫৮, হাদীস : ৭৩১৫; জামে তিরমিযী ২/৩২; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৭)
(চলবে ইনশাআল্লাহ্)