কুরআন পড়া এবং কুরআন শিক্ষার কারণে পিতা-মাতার ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে উল্লেখযোগ্য কিছু বাণী রয়েছে। এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

কুরআনে কুরআন পাঠকের ফজিলত

  1. মুমিনদের জন্য কুরআনের মর্যাদা
  • “যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে প্রশান্ত হয়েছে, জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয়ের প্রশান্তি।”
    (সুরা রা’দ, ১৩:২৮)
    কুরআন পাঠ করলে হৃদয়ে শান্তি ও প্রশান্তি আসে, যা মুমিনদের জন্য বিশেষ উপকারি।
  1. পাঠকদের উচ্চ মর্যাদা
  • “এটাই এমন একটি কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন তুমি মানুষকে আল্লাহর নির্দেশে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনতে পারো।”
    (সুরা ইব্রাহিম, ১৪:১)
    কুরআন পাঠকরা আল্লাহর নির্দেশনার মাধ্যমে অন্ধকার থেকে আলোর পথে পরিচালিত হন, যা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

হাদিসে কুরআন পাঠকের ফজিলত

  1. প্রতি অক্ষরের সাওয়াব
  • “যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে, তার জন্য প্রতিটি অক্ষরের জন্য একটি করে নেকি অর্জিত হয়। আমি বলছি, আলিফ, লাম, মীম একটি অক্ষর নয়; বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর।”
    (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৮০৮)
    কুরআন পাঠের মাধ্যমে প্রতি অক্ষরের জন্য আল্লাহ এক একটি নেকি প্রদান করেন, যা পরকালে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে গণ্য হয়।
  1. কুরআন এবং আল্লাহর সান্নিধ্য
  • “যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং তার সাথে আমল করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে মর্যাদা দেবেন এবং কুরআন তার জন্য শাফায়াত করবে।”
    (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৭৭৫)
    কুরআন পড়া এবং এর শিক্ষার উপর আমল করা কিয়ামতের দিন শাফায়াতের মাধ্যম হয়ে দাঁড়াবে।

কুরআন পাঠকের পিতা-মাতার ফজিলত

  1. কুরআন পড়ানোর পুরস্কার
  • “যে ব্যক্তি কুরআন শেখায় এবং অন্যদের শেখায়, তার পিতা-মাতাকে আল্লাহ আসমানের পরিধির মতো পোষাক পরাবেন।”
    (সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৫০২৭)
    কুরআন শেখানোর জন্য পিতা-মাতাকে মহামূল্যবান পুরস্কার প্রদান করা হয়।
  1. মৃত্যুর পর সাওয়াব
  • “যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা দেয় এবং মৃ্ত্যুর পরে কুরআন পঠন করে, তার পিতা-মাতাকে চিরকালীন পুরস্কার দেওয়া হবে।”
    (মুসলিম, হাদিস নং ১৮৪)
    কুরআন শেখানো এবং তা দ্বারা সাওয়াব লাভের মাধ্যমে পিতা-মাতার জন্য দীর্ঘকালীন পুরস্কার লাভ হয়।

উপসংহার

কুরআন পাঠ ও শেখার মাধ্যমে ব্যক্তিগত সাওয়াব এবং আখিরাতের পুরস্কার অর্জন করা সম্ভব। কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে পিতা-মাতার জন্য মহিমান্বিত পুরস্কার নিশ্চিত করা হয়, যা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে। কুরআন পঠন এবং শিক্ষা করার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনে শান্তি ও উন্নতি অর্জন করতে পারে।

কুরআন পড়া এবং পিতা-মাতার জন্য বিশেষ ফজিলতের বিষয়ে হাদিসে আরও কিছু বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এখানে কুরআন পড়া এবং তা শেখার কারণে পিতা-মাতার মর্যাদা বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত হাদিস তুলে ধরা হলো:

১. কিয়ামতের দিনে পিতা-মাতার মর্যাদা বৃদ্ধি

এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং এর উপর আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে একটি মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলো থেকেও বেশি উজ্জ্বল হবে। এমনকি যদি সূর্য তোমাদের ঘরে থাকে তাহলেও তার আলো সূর্যের চেয়ে অধিক হবে।”
(আবু দাউদ, হাদিস নং ১৪৫৩)

এই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, যেসব সন্তান কুরআন শিখে এবং এর উপর আমল করে, কিয়ামতের দিন তাদের পিতা-মাতা বিশেষ সম্মানিত হবেন এবং তাদের জন্য আসমানে উজ্জ্বল মুকুট পরানো হবে। এ থেকে বোঝা যায় যে, সন্তানদের কুরআন শেখার এবং এর উপর আমল করার দ্বারা পিতা-মাতার আখিরাতে অনেক ফজিলত অর্জিত হবে।

২. কুরআন পড়া এবং পুরস্কার লাভ

অন্য একটি হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি কুরআন শেখে, পড়ে এবং এর উপর আমল করে, কিয়ামতের দিন তাকে একটি মহামূল্যবান মুকুট পরানো হবে এবং তার পিতা-মাতাকে এমন পোশাক পরানো হবে যা সারা দুনিয়ার চেয়েও বেশি মূল্যবান। তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের এই পুরস্কার কেন দেওয়া হলো? তখন বলা হবে, তোমার সন্তানের কুরআন শিক্ষার কারণে।”
(মুস্তাদরাক হাকিম, হাদিস নং ২০৭৫)

এই হাদিসটি আমাদের জানায়, যদি কোনো সন্তান কুরআন শেখে এবং তার উপর আমল করে, তবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন এবং মহামূল্যবান পোশাক পরিয়ে দেবেন। এটি পিতা-মাতার জন্য আখিরাতের এক বিশাল পুরস্কার।

৩. কুরআনের মাধ্যমে মর্যাদা বৃদ্ধি

নবী করিম (সা.) বলেন:

“কুরআন তার পাঠকদের জন্য সুপারিশ করবে। যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে, কুরআন কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী হিসেবে তার পাশে দাঁড়াবে। এবং সে তার পিতা-মাতার জন্যও সুপারিশ করবে।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৭৯১)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কুরআন কিয়ামতের দিন তার পাঠকদের জন্য সুপারিশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতাকেও আল্লাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

উপসংহার

উপরে বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় যে, কুরআন শেখা ও আমল করার মাধ্যমে শুধু ব্যক্তি নয়, তার পিতা-মাতাও আখিরাতে বিশেষ ফজিলত এবং সম্মান অর্জন করবেন। কুরআন পাঠ ও শেখার এই ফজিলত শুধু দুনিয়াতে নয়, আখিরাতেও অপরিসীম পুরস্কার এবং মর্যাদা এনে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *